মাত্র তিনজন সদস্য নিয়ে একটি ছোট সুখী পরিবার হল ফাশন মডেল চন্দন মজুমদারের পরিবার। মা ও বাবা ছাড়া তিনিই একমাত্র সন্তান তাদের। পরিবারটিতে সুখ,শান্তি ও অশেষ ভালোবাসায় ভরপুর। পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছেও সব থেকে ভালোবাসার মানুষ হলেন এই পরিবারের সদস্য। এভাবেই সবাইকে নিয়ে ঈদ,পূজা,বড়দিন সহ সকল প্রকার সামাজিক অনুষ্ঠান সমূহ একসাথে মিলেমেশে পালন করে এসেছেন। সাল- ২০১৬। পরিবারটিতে প্রথম বড় ঝড় নেমে আসে। মায়ের ক্যান্সার ধরা পরে। আদর-যত্নে বড় হওয়া মডেল চন্দন মজুমদার কিছু বুঝে উঠার আগেই যেন তার উপর এক আকাশ সমান দায়িত্ব চলে আসে। দূরে সরে যেতে থাকে সকল কাছের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন। হয়ে যান একদম একা। কিন্ত কোনভাবেই নিজে না ভেঙে গিয়ে ও মা-বাবা দুইজনকেই মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে ২০১৬ সালের গোটা বছরটাই একা লড়েছেন। টানা এক বছর কোলকাতায় থেকে মাকে পুরোপুরিভাবে সুস্থ করেই দেশে ফিরেন এই মডেল। পাশে থাকাতো দুরের কথা, মানসিকভাবেও তাকে বহুবার ভেঙে দিয়েছিলেন তার কাছের সব মানুষজন। কিন্ত তিনি একেবারেই না ভেঙে মাকে সুস্থ করে নিয়ে এক মহান বিজয় লাভ করেন। যে সমস্ত কাছের মানুষজন তার কঠিন সময়ে তাকে একা করে দিয়েছিলেন, তাদের মুখে এক অদৃশ্য চড় যেন মেরে দিলেন এই বিজয়ী সন্তান। খারাপ সময়ের পর আবার খুব ভালো সময়ের মধ্য দিয়েই যাচ্ছিলেন। কিন্তু চলমান ২০২০ সাল আবারও এক বড় ঝর নিয়ে আসে। গোটা দুনিয়া যখন মহামারি করোনায় আক্রান্ত, প্রচণ্ড সেই মহামারীর উদ্বিগ্নের মধ্যে তার ৮৫ বছরের বৃদ্ধ বাবা, বয়সের কারনে নরম হয়ে পরেন। চলে যান একেবারে বিছানাতে। ঠিক আবারও আগের মত দূরে চলে যায় তার মাঝে আসা কাছের মানুষজন। আবারও হয়ে যান একদম একা। এবারও তিনি একেবারে না ভেঙে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে, বাবার সেবায় নিজেকে নিয়জিত করে ফেলেন। বন্ধ করে দেন- অফিস, শুটিং ও সকল যোগাযোগ। প্রতিবারের ঈদের ফটোশুটে অংশ নেওয়া এই জনপ্রিয় ফ্যাশন মডেল এবারের কোন ঈদের শুটে অংশ নেননি। সব কিছু বাদ দিয়ে একেবারে নিজেকে নিয়জিত রেখেছেন তার মা-বাবার সুস্থ জীবন যাপনের সেবায়। তরুন প্রজন্মের এক দৃষ্টান্তমূলক রচনা সৃষ্টি করে গেছেন। অনেক যোগাযোগের পর তার সাথে কথা হলে যখন প্রশ্ন করা হয়, কিভাবে একাই এই সব কিছু সামলেছেন? তিনি তখন বলেন- "ইমোশনাল বলেই আজ মা-বাবার খেয়াল রাখতে পেরেছি। এত দূর পর্যন্ত করতে পেরেছি। নাহলে একদমই পারতাম না! মানুষ ইমোশন/ইমোশনাল/আবেগ এই ব্যাপার গুলোকে খুব দুর্বল মনে করে। অনেকে আঘাতও করে। কিন্তু সত্যি বলতে আজ আমি যা করতে পেরেছি আর যা করতে পারছি তা একমাত্র ইমোশনের জন্য। কাছের মানুষজন সবসময় বলত- তুই অনেক ইমোশনাল! এতো ইমোশনাল হলে টিকে থাকতে পারবিনা! ইমোশন দিয়ে দুনিয়া চলেনা! আমারতো গোটা দুনিয়া চলার দরকার নাই। আমার মা-বাবা সুস্থ ভাবে থেকে চলতে পারলেই হল! মা-বাবাই তো আমার দুনিয়া! বলাটা খুবই সোজা! করে দেখানোটাই হচ্ছে মুখ্য বিষয়। যারা আমার ইমোশন/আবেগ নিয়ে হাসিঠাট্টা করেছে, তাদের একটাই পরামর্শ আমার, সৃষ্টিকর্তা না করুন, কখনো যদি এমন মুহূর্ত পার করতে হয়, আমাকে যেন ডাক দেয়। বুকে আগলে রাখবো। কষ্টটা কত হালকা লাগে, হয়তো তখন বুঝতে পারবে যে, ইমোশন কোন দুর্বলতা না। এটা একটা বড় শক্তি, লড়াই করার। আমি এখন দুর্বল নই। তবে ইমোশনাললেসও কিন্তু নই। ইমোশন ছিল, আছে আর থাকবেই।" এতো কিছুর পরও তিনি কেন কোন প্রকার রাগ-অভিমান না করেই তাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া কাছের মানুষজনের জন্য এরকম চিন্তাধারনা কেন রাখেন? এ ব্যাপারে তাকে আবার প্রশ্ন করা হলে তিনি মিষ্টি করে হেসে বলেন- " বাস্তবতা নিয়ে ভাবা ভালো। বাস্তবতা ফেইস করতেই হবে। তার মানে এই নয়, নিজের মানবতা, মনুষ্যত্ব কিংবা কাছের মানুষের প্রতি আবেগকে বিসর্জন দিয়ে করতে হবে। আমি না হয় একা লড়তে পেরেছি, হয়তো অনেকে তা পারবেও না। বাস্তবতা নিয়ে বড়সড় লেকচার মারা খুব সহজ। কিন্তু যখন তারই জীবন বাস্তবমুখী হবে, তখন পারবে কি? লড়াই করতে? মানুষের জীবন ক্ষণিকের। আবেগ ও ভালোবাসার জয় সবার উপরেই। কারো খারাপ কিংবা কঠিন সময়ে, আবেগ/ইমোশনের দুর্বলতা নিয়ে, তাকে একেবারেই একা করে দেওয়ার সময় এটাই ভাবা উচিৎ, সময়টা বদলে যায় কিন্তু। শেষ মুহূর্তে আবেগ/ইমোশনটাই সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে, কঠিন সময়ে লড়তে সাহায্য করে।" বর্তমানে চন্দনের বাবা কিছুটা সুস্থ আছেন। তবুও বয়সের কারনে অনেকটাই নরম হয়ে পরেছেন তার বাবা। সমস্ত কিছু বাদ দিয়েই সম্পূর্ণ বাবার সেবায় নিজেকে নিয়জিত রেখেছেন এই গর্বিত সন্তান। ফেইসবুক কিংবা ইন্সটাগ্রামে দেখা যাচ্ছে বাবাকে ধরে হাঁটানোর দৃশ্য কিংবা বাবার পাশে শুয়ে ভাবছেন সামনের দিনগুলো। কবে নাগাত ক্যামেরার সামনে ফিরবেন এই মডেল, তা নিয়ে তিনি এই মুহূর্তে কিছুই বলতে চান না। তার কাছের মিডিয়া বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে জানা যায়, সব কিছু গুছিয়ে নিয়েই তিনি অবশ্যই আবার ফিরবেন তার গ্লামার মডেলিং জীবনে। ততদিন পর্যন্ত তিনি একদম একা থাকতে চান ও তিনি সবাইকে তার পরিবারের জন্য দোয়া-প্রার্থনা করতে বলেন।
প্রতিবেদনঃ আফজাল হোসেন রাব্বি
(বিডি ফ্যাশন মডেল নিউজ)